গাজা যুদ্ধের বর্ষপূর্তির দিন সোমবারে ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফায় রকেট হামলা চালিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ আর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়েছে। এদিকে ইসরায়েলের প্রস্তুতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, তারা লেবাননে তাদের আক্রমণ আরও বিস্তৃত করবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাসের ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। ওই দিনই হামাস শাসিত গাজায় পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধের সূচনা করে ইসরায়েল। এক বছর পূর্ণ হওয়া এই যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় ৪২ হাজার বাসিন্দা নিহত হয়েছেন আর ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে ভাষ্য দেশটির। ওই দিন ইসরায়েল থেকে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে হামাসের যোদ্ধারা।
এই ঘটনার বর্ষপূর্তির দিনটি ইসরায়েলিরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে স্মরণ করেছে।
গাজা যুদ্ধ এখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা একটি সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার পরিস্থিতিতে আছে।
এক বছরের যুদ্ধে হামাস ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। তাদের শাসিত ভূখণ্ড গাজা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তারপরও ফিলিস্তিনি এই গোষ্ঠীটি রূপকথার ‘ফিনিক্স পাখির’ মতো ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়েছে।
লেবাননে হামাসের মিত্র ইরানের সমর্থনপুষ্ঠ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সোমবার জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি বন্দরশহর হাইফার একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘ফাদি ১’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং হাইফার ৬৫ কিলোমিটার পূর্বে টেবেরিয়াসেও হামলা চালিয়েছে। সশস্ত্র এই গোষ্ঠী পরে আরও জানায়, তারা হাইফার উত্তরে কয়েকটি এলাকা লক্ষ্য করেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েল জানায়, হামাসের হামলার বর্ষপূর্তির দিনটিতে ভূখণ্ডে অন্তত ১৯০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে আর এসব হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বিমান বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যস্থলগুলোতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে আর হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে তাদের আরও দুই সেনা নিহত হয়েছে।
এদের নিয়ে লেবাননের ভেতরে নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা ১১ জনে দাঁড়িয়েছে, জানিয়েছে রয়টার্স।
ইসরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননে ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ক্রমেই আরও তীব্র হতে থাকা ইসরায়েলি বোমা হামলায় বহু লেবাননি উদ্বিগ্নভাবে আশঙ্কা করছেন, হয়তো তাদের দেশও গাজার মতো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হবে।
ইসরায়েলি বাহিনী আরবিতে দেওয়া এক বার্তায় সৈকতগামী ও নৌকা ব্যবহারকারীদের লেবাননের উপকূলের একটি অংশ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে বলেছে, তারা শিগগিরই সাগর থেকে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকার একটি পৌরভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ১০ দমকল কর্মীসহ বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।
এক বছর আগে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে রকেট ও ড্রোন হামলা শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০০০ লেবাননি নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে।
হামাস ও হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আঞ্চলিক শক্তি ইরান ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে এমনটি জানিয়ে তারা লক্ষ্যস্থলগুলো যাচাই করে দেখছে বলে জানিয়েছে। ইরানের তেল স্থাপনাগুলো সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থল হতে পারে।
এভাবে দুই স্থানীয় শক্তির মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্য দিয়ে বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হলে তাতে সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের ।