
খাদিজা আক্তার সায়মা:
নতুন একটি বীজ যখন অঙ্কুরিত হয়, তখন সেটিকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে তবেই সে সুগঠিত বৃক্ষে পরিণত হয়। একইভাবে, তারুণ্যের সঠিক দিকনির্দেশনা একটি জাতির ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারুণ্যের উদ্দীপনা, সজীবতা ও সৃষ্টিশীল ভাবনাকে কেন্দ্র করে "এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই" প্রতিপাদ্যে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে ১৩-১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ অনুষ্ঠিত হলো তারুণ্যের উৎসব-২০২৫।
প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি তোলারাম কলেজ, যা ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তরুণ মানেই নতুন আশার প্রতিচ্ছবি। সেই নতুন স্বপ্ন ও পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত চার দিনব্যাপী এই উৎসবে ছিল নানা আয়োজন, যেখানে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, উদ্যোক্তা মানসিকতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমন্বয় ঘটেছে।
প্রায় প্রতিটি বিভাগ থেকে বিভাগীয় প্রধানদের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্টল দেওয়া হয়। প্রতিটি স্টলেই ছিল ভিন্নধর্মী আয়োজন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, পিঠা, গহনাসহ, মাঠির তৈজসপত্র ও সাহিত্যে চর্চার জন্য ছিল বই। প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনও যেমন ছিল তেমনি দৃষ্টি কেড়েছে জুলাই চত্বরের ব্যতিক্রমী আয়োজন। বিজ্ঞান বিভাগের স্টলে ছিল বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রজেক্টের প্রদর্শনী। শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সরব অংশগ্রহণে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মেলা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।
মেলায় রসায়ন বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা একটি স্টল দেই। স্টলে ছিল ল্যাব পরীক্ষিত হ্যান্ড-সেনিটাইজার, বিভিন্ন পিঠা, পুডিং, ফুসকা ও পাস্তা। এছাড়াও ছিল উন্নতমানের বিভিন্ন গাছের বীজ ও সার। মেলায় অংশগ্রহণের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে গিয়ে মায়েদের কষ্ট বুঝতে পেরেছি, রান্নায় পারদর্শী হয়েছি। একজন ফুসকা বিক্রেতা কিভাবে রাত-দিন পেটের দায়ে কাজ করেন তা বুঝতে পেরেছি। সবার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে কথা বলার জড়তা কাটিয়েছি। বন্ধুদের মাঝে সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। পড়াশোনা শেষ করার করে কিভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করা যায় তারুণ্যের উৎসব মেলা তারই দৃষ্টান্ত।
শিক্ষার্থীদের নতুন উদ্ভাবনী কর্মশালা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সুযোগ দিতে প্রতি বছর এ ধরনের আয়োজন খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এই মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়নি, বরং দেশ ও জাতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ারও খুলেছে। এমন আয়োজন চলমান থাকলে ভবিষ্যতে তারুণ্যই হবে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
লেখক: শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ।