আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শুরু হচ্ছে গোলাপবাগ মাঠ রক্ষা আন্দোলন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সিজন-২। এটা শুধু টুর্নামেন্ট না এটা একটি আন্দোলনের ফসল। এই আন্দোলনের ফলে আজ যাত্রাবাড়ীবাসী একটি মাঠ রক্ষা করতে পেরেছে। কারণ ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত গোলাপবাগ মাঠটি একসময়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণের ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের জন্য খেলাধুলা সব সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়।
২০১৩ সালে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষ হলেও যখন মাঠটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দখল করে রাখে তখন থেকেই এলাকার যুব সমাজ মাঠ দখল মুক্ত করার জন্য হাসনাত জুবায়েরের নেতৃত্বে গোলাপবাগ মাঠ রক্ষা আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তীতে মাঠের একাংশ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সুইপার কলোনি বানানোর জন্য বরাদ্দ দেবার একটা চেষ্টা চালানো হয়, ঠিক তখনই সংগঠনটি তাদের আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর পাশাপাশি বাস্তবে আন্দোলন শুরু করে, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আইনজীবী সংস্থা (বেলা), পরিবেশবাদী যুব সংস্থা (গ্রীন ভয়েজ) তাদের এই আন্দোলনে সঙ্গী হিসেবে কাজ করে। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ৩১ শে অক্টোবর তৎকালীন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন মাঠটিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। একই বছর ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে জল সবুজে ঢাকা প্রকল্পের আয়তায় মাঠটির আধুনিক নকশা উন্মোচিত হয়।
কাজ শুরু হবার পর কাজের ধীর গতিকে গতিতে ফেরাতে সংঘটনটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
তৎকালীন মেয়র তার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে কাজের ৫৫ শতাংশ বাকি রেখেই মাঠটি উদ্ভোধন করেন।
এরপর সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব পাবার পর সংগঠনটি মাঠের সংস্কার কাজে গতি ফিরিয়ে আনার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাথে বেশ কয়েকবার বোঝাপড়ার চেষ্টা করেন।
একটা পর্যায়ে এসে ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে এসে মাঠটি সংস্কার কাজ অসম্পন্ন রেখেই সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
মাঠ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি হাসনাত জুবায়েরের নেতৃত্বে এস এম মাইনুল হাসান সাধারণ সম্পাদক, নূরে আলম ফাহাদ কার্যকরী সভাপতি, সোহেল ভুঁইয়া সাংগঠনিক সম্পাদক, কামরুজ্জামান স্বাধীন গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, মো রাজীব আরিফ দপ্তর সম্পাদক, সাবের হোসেন রাজু ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক, মো স্বপন অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, সাজ্জাদ হোসেন বাবু সিনিয়র সহ সভাপতি অনেক পরিশ্রম করে এই আন্দোলনের সফলতা বয়ে নিয়ে আসে। তাদের একতাই মুলত আন্দোলনে স্বার্থকতা নিয়ে আসে।
এরপর গত বছর আগষ্ট মাসে সংগঠনটি ক্রিকেট প্রেমী তরুণ যুবাদের সাথে নিয়ে গোলাপবাগ মাঠ রক্ষা আন্দোলন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সিজন ১ পরিচালনা করে, আয়োজনে স্বকীয়তা থাকায় টুর্নামেন্টটি আশেপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর সংগঠনটি আরো বড় পরিসরে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে।
আর এই টুর্নামেন্টের অপেক্ষায় ছিলো এলাকার সকল তরুন ও যুব সমাজ। তারা সবাই এমন টুর্নামেন্ট এ অংশ গ্রহন করতে পেরে ব্যাপক খুশি। কারণ এটা শুধু একটি খেলা নয় এটা এলাকার মাঠ রক্ষার আন্দোলনের ফল। এটাতে এলাকার সাফল্য গাথা আছে। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে এলাকার সবাই একত্রিত হতে পারে। আর খেলাধুলার মাধ্যমেই এলাকায় মাদক-নেশা দুর করা যায়। তাই সবাই টুর্নামেন্ট আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
এরই মাঝে নাম নিবন্ধন, দলের নাম, লোগো, আইকন প্লেয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এই টুর্নামেন্টে নিলামের মাধ্যমে প্রত্যেকটি দল গঠন করা হয়। যাতে করে কোন দল অতিরিক্ত সুবিধা না পেয়ে থাকে। কমিটির কথা হলো এখানে আমাদের এলাকার সকলে অংশ গ্রহন করবে। সবাইকে এক পাল্লায় রাখা হয়। কাউকে ছোট করে দেখা হয় না। তাই সবাই সমান অধিকার পায়। যে যে ক্যাটাগরিতে খেলে থাকে তাকে সেই ক্যাটাগরির নিলামে তোলা হবে। সেখান থেকে প্রত্যেকটা দল তাদের পয়েন্ট এবং নিয়ম অনুযায়ী দল গঠন করবে। নিলামের পর জার্সি উন্মুক্ত করা হবে।
টুর্নামেন্টে ১২ দল, ১৫৬ জন প্লেয়ার খেলোয়াড় অংশ গ্রহণ করবে। আগামী শুক্রবার নিলাম। খেলা শুরু ২০ তারিখ থেকে, খেলা প্রতি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি দলে অতিরিক্ত ২ জন সহ মোট খেলোয়াড় ১৩ জন থাকবে।
দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলা হবে, খেলার স্কোর ক্রিক হিরোস অ্যাপস এর মাধ্যমে হবে, পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা ৪ দল সরাসরি সেমিফাইনাল খেলবে।
টুর্নামেন্টে দেশের অনেক নামী দামী কোম্পানী সম্পন্সর দিয়ে থাকে। এ বছর টুর্নামেন্টে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তারা পাশে পাচ্ছে দেশ বরেণ্য স্থপতি ইকবাল হাবিবের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ লিমিটেড কে । সম্পন্সরদের ভাষ্য, এসব টুর্নামেন্টের মাধ্যমেই তারা তাদের পণ্যের বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা করার ভালো সুবিধা পেয়ে থাকে। কারণ এসব টুর্নামেন্টের প্রতি এলাকাবাসীর অনেক আগ্রহ থেকে থাকে। তাই সহজে নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রসার কাজ করা যায়।