
ফজলুল করিম শেরপুর প্রতিনিধি :
সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢু মারলেই আমরা ভাইরাল কত কিছুই না দেখতে পাই। গত কয়েকদিন ধরে আমার ফেসবুকে স্ক্রুল করতেই চোখে পড়ছে শেরপুরের শেরী ব্রিজ সংলগ্ন মৃগী নদীর অববাহিকায় নয়নাভিরাম সূর্যমুখী ফুলের বাগানে হাজারো মানুষের ভীড়। এই বাগানের ভেতরে গিয়ে ছবি তুলার সুযোগ করে দিয়েছে বাগানের মালিকরা। এর জন্য তারা শুরুর দিকে জনপ্রতি ২০ টাকা টিকেট নেয়।
পরে কয়েকদিন যেতেই যখন লক্ষ্য করলো হাজারো লোকের সমাগম তখন টিকেটের দাম বেড়ে হয়ে যায় ৫০ টাকা। নয়জন উদ্যোক্তা মিলে সাড়ে চার একর জমির ওপর সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। ফুল ফোটার পর থেকেই ফুলপ্রেমীদের নজর কাড়ে হলুদের আভায় সৌন্দর্যমন্ডিত বাগানটি। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুলপ্রেমীদের পদচারণার মুখরিত হয়ে উঠছে কান্দাশেরী নামের এই এলাকাটি।
চারদিকের সারি সারি হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য অবলোকন করতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছেন। কেউ ফুল ধরে বা ফুলের পাশে দাড়িয়ে সেলফি/ছবি তুলছেন আবার কেউ কেউ টিকটক বানাচ্ছেন। পুরো বাগানটিতে তরুণ-তরুণী, মা-বাবার সাথে ছোট বাচ্চারাসহ অর্থাৎ বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীরা ঘুরে হাসিমুখে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। যা দেখে সহজে অনুমেয় করা যায় এই ফুলের মুগ্ধতায় নিজেকে মনকে মুহূর্তেই আন্দোলিত করে তুলেছেন ফুলপ্রেমিরা।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাগানের সৌন্দর্যমন্ডিত দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে এর আকর্ষণ আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। তাইতো প্রতিদিন বাগানটির সৌন্দর্য এক নজর উপভোগ করতে বহুসংখ্যক প্রকৃতি প্রেমী ছুটে আসছেন।
নাসরিন আকিদা নামের একজন ফুলপ্রেমীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এতো বড় ফুলের বাগানের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখেই মনটা ভরে গেছে। ৫০ টাকার টিকেট আমাদের কাছে বেশি মনে হয়নি। কারণ এখানের পরিবেশ খুবই ভালো। পরিবারের সবাইকে নিয়ে শহরের কাছে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সুন্দর একটি বিকেল কাটানোর এমন পরিবেশ খুজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। তাই তো আমরা সারাদিনের ক্নান্তি শেষে বোনদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসে অনেক ভালো অনুভব করছি। পাশাপাশি ফুলের সাথে নিজেকে মেলে ধরতে পারছি। আর স্মৃতি হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের সাথে ছবি তুলে রাখছি।
বাগান মালিক হায়দার আলী বলেন, সাড়ে চার একর জমিতে আমরা সূর্যমুখীর চাষ করেছি। ফুল ফোটার পর থেকে এখানে অনেক লোকজন ঘুরতে আসে তাই আমরা এখানে টিকেট সিস্টেম করেছি। আশা করছি লাভবান হতে পারবো। যেনো দর্শনার্থীরা ফুল ছিড়তে ও যাতায়াতের সময় ফুলগাছগুলো ভাঙতে না পারে সেগুলোর দৃষ্টি রাখতে তাই কয়েকজন লোক রেখে দিয়েছি।
শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসলিমা খানম নিলু বলেন, এখানকার কৃষকরা তেল জাতীয় ফসল হিসাবে শুধু সরিষার সাথে পরিচিত। তাই আমরা তেল জাতীয় নতুন একটি ফসল হিসাবে সূর্যমুখী ফুলের বাগান করতে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করি। পরে তাদের সূর্যমুখীর বারি-৩, হাইসান-৩৩, হাইসান-৩৬ জাতের বীজ এবং সার প্রদান করি। বিশেষ করে শেরপুরের সদর উপজেলা সূর্যমুখীর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সূর্যমুখীর ফলন সরিষার তুলনায় অনেক বেশি। সরিষাতে হেক্টর প্রতি ফলন হয়ে থাকে ১.৭ থেকে ১.৮ মেট্রিক টন সেখানে সূর্যমুখীর ফলন হয় প্রায় ২ মেট্রিক টন। সরিষার তেলের চেয়ে সূর্যমুখীর তেলটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি বিশেষ করে যারা হার্টের রোগী। কৃষকরা দামও বেশি পাবে।
এটি বর্তমানে শেরপুর সদর উপজেলার একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়ে গেছে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসছেন তারা যেমন ফুলের সাথে ছবি তুলছেন সাথে সাথে সূর্যমুখী যে একটা তেল সেটাও জেনে যাচ্ছেন ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা বার বার আবাদ করা জমির উর্বরতা বাড়াতে কৃষকদের সূর্যমুখী চাষ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। এ বছর সূর্যমুখী চাষে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৭ হেক্টর জমিতে। যা সয়াবিন তেলের আমদানি হ্রাস করে আমাদের তেলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।