রাজধানীর সবজির বাজারে নৈরাজ্যের অভিযোগ বেশ পুরনো। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্য আকাশ-পাতাল৷ ক্রেতাদের অভিযোগ থাকলেও সুরাহা মিলছে না।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর রায়ের বাজার পাইকারি সবজির আড়ত ও খুচরা বাজারের সঙ্গে সবজির দাম তুলনা করে দেখা যায়, পাইকারির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
রায়ের বাজার আড়ত থেকে পাওয়া তথ্যমতে- ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ ও পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকার বাজারে সবজি যায় এ বাজার থেকেই।
এসব এলাকার খুচরা বাজারে সবচেয়ে কম দামি সবজির তালিকায় রয়েছে পেঁপে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। অথচ পাইকারি বাজারে সেই পেঁপে মাত্র ১৬ টাকা।
রায়ের বাজার আড়ত ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি হিসেবে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে বস্তা হিসেবে৷বস্তায় যে কয় কেজিই থাকুক, ক্রেতাকে কিনতে হবে পুরোটাই এবং কেজি দরে। প্রতি কেজি ১৬ টাকা।
আবার খুচরা বাজারে যে লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে, তা পাইকারি বাজারে মিলছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস দরে। আর একদিনের পুরনো লাউ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ টাকায়।
রাজধানীর ধানমন্ডির সংকরে প্রতি পিস নারিকেলি কচু বিক্রি হতে দেখা গেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। রায়ের বাজারের পাইকারি আড়ত থেকে সেই কচু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা পিস দরে। অর্থাৎ ২০ টাকা বিনিয়োগ করে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা নিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
কেজিতে কিনে ফালি হিসেবে বিক্রি করে খুচরা ব্যবসায়ীদের দ্বিগুন মুনাফার পথ মিষ্টি কুমড়া। খুচরা বাজারে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয় ফালি হিসেবে। এক পিস কুমড়াকে ৬ টুকরা করে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। যার প্রতি টুকরার ওজন আধা কেজির কাছাকাছি। পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজিই ৩০ টাকা।
রায়ের বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, আমরা মিষ্টি কুমড়া কেজিতে বিক্রি করি। কেজি ৩০ টাকা। কচু ২০ টাকা পিস। আজকে দুপুর পর্যন্ত রেট এইটাই। দুপুর দুইটার পর আবার গাড়ি আসবে৷ তখন দাম কম-বেশি হতে পারে।
অর্থাৎ শুক্রবার সকাল থেকে পাইকারি বাজারের সকালের দামের সঙ্গেই সমম্বয় থাকার কথা। কিন্তু সেই সমম্বয় একেবারেই দেখা যায়নি পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে।
খুচরায় ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া কচুর লতি পাইকারি বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। অর্থাৎ খুচরা বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি।
খুচরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শশা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৮ টাকা কেজি দরে৷
এ বিষয়ে খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আড়তের দামের পরেও তো আলাদা খরচ আছে৷ গাড়ি ভাড়া আছে৷ সেগুলোও তো হিসাব করা লাগবে।
তবে এ যুক্তি বেশ দূর্বল বলে মনে করেন আড়তের কর্মীরা৷রায়ের বাজার আড়তে পণ্য ওঠানামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, আমাদের আড়তে তো উত্তরা থেকে কেউ সবজি নিতে আসে না। আশপাশের বাজারের লোকজন নেয়, যারা ভ্যানে বিক্রি করে তারা নেয়। গাড়ি ভাড়া তো তাগো বেশি পড়ে না। লেবার খরচও বেশি না। যে যে বাজারে আড়ত থেকে সবজি যায়, আপনি ধরতে পারেন, লেবার আর গাড়ি ভাড়া নিয়া কেজি ২ থেকে ৩ টাকা খরচ হইতে পারে। এর বেশি না।
দামের পার্থক্য আরও যাচাই করে দেখা যায়, চড়া দামি সবজিতে দামের পার্থক্যও বেশি। খুচরা ও পাইকারিতে কেজিতে ৭০ টাকা পার্থক্য টমেটোর। রায়ের বাজার আড়ত থেকে ৪৫০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) দরে বিক্রি হচ্ছে পাঁকা টমেটো। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৯০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে সেই টমেটো কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পার্থক্য দেখা গেছে, করলা, উস্তা, বেগুন, ঢেড়স, পটল ও ধুন্দলে৷
এদিকে পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে পার্থক্য কমে এসেছে কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রে। খুচরা বাজারে এদিন ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে কাঁচা মরিচ। পাইকারি বাজারে তা ১২০ টাকা।
এদিকে ৪ টাকা আটি দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে শাপলার লতা। যা খুচরা বাজার পর্যন্ত আসতে আসতে ১৫ টাকা আটি হয়ে যাচ্ছে। বাজার ভেদে ৪ টাকা আটির শাপলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।