
সুরাইয়া ইয়াসমিন সুমি:
সময় বয়ে যায়, কিন্তু কিছু স্মৃতি রয়ে যায় হৃদয়ের গভীরে। এমন কিছু মুহূর্ত থাকে, যা চাইলেও ফিরে পাওয়া যায় না, তবে মনের ভেতর অমলিন হয়ে থাকে। আমার জীবনে ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট তেমনই এক অবিস্মরণীয় দিন, যা আজীবন মনে গেঁথে থাকবে।
আমার কলেজ সরকারি ব্রজলাল (বি. এল) কলেজ খুলনার দৌলতপুরে ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে আমি ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছি। সবসময় ইচ্ছে ছিল মানুষের জন্য কিছু করার, বিশেষত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
২০২৪ সালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়, আর্তনাদে ভরে ওঠে আশ্রয়হীন মানুষের জীবন। চারদিকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়। আমাদের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বড় ভাই ও আপুরা যখন উদ্যোগ নিলেন বন্যার্তদের সহায়তার জন্য, তখনই আমি উপলব্ধি করলাম—এটাই আমার অপেক্ষার দিন।
আমি চেয়েছিলাম এই মহৎ উদ্যোগের অংশ হতে। বন্ধুদের কাছে কান্নাকাটি করে বললাম, যেন আমাকে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এক বড় ভাইয়া অবশেষে আমাকে তাদের সঙ্গে কাজের সুযোগ দিলেন।
ত্রাণ সংগ্রহের জন্য বক্স বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো। রাতে খাতার শক্ত মলাট দিয়ে নিজেই বানিয়ে ফেললাম একটি বক্স। বক্স বানানোর সময় মনে হচ্ছিল—এ যেন কেবল একটি বস্তু নয়, বরং মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা ও সহানুভূতির প্রতীক।
পরদিন ত্রাণ সংগ্রহের জন্য রাস্তায় নামলাম। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানুষের সাহায্য চাওয়া শুরু করলাম। তখন বুঝতে পারলাম, আমাদের সমাজে কত রকমের মানুষ রয়েছে! এই অভিজ্ঞতা আমাকে নতুনভাবে সমাজকে বুঝতে শিখিয়েছে।
আমরা যা সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম, তা যথাসম্ভব বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। আমাদের সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা নিজ হাতে এসব ত্রাণ পৌঁছে দেন দুর্গত এলাকায়। তাদের আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করে। তাদের দেখেই আমিও সাহস ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট শুধু একটি দিন নয়, এটি আমার মানবিক চেতনার জাগরণ। এটি আমাকে উদার হতে শিখিয়েছে, সমাজের জন্য কাজ করার পথ দেখিয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু করব, কিন্তু এদিনের অনুভূতি কখনো মলিন হবে না। কিছু মুহূর্ত সত্যিই ভোলার নয়—এদিন আমার হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, সরকারি বি. এল কলেজ, খুলনা।
/শুভ্র