ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা দাওগাঁও ইউনিয়নে সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলাম ও ভাই তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও দখলবাজির অভিযোগ উঠেছে। সাবেক মেম্বার ও সাবেক বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম (বর্তমানে জাতীয় পার্টি নেতা) তার বাহিনীর ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ এর ভয়াবহতায় ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। নজরুলের নেতৃত্ব প্রায় শতাধিক তার বাহিনী হামলা চালিয়ে দাওগাঁও ইউনিয়নে প্রায় ২০ টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়েছে চরপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র শফিকুল ইসলামের বাড়িতে। আসবাবপত্র বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় নগদ ৪ লক্ষ টাকা লুটসহ প্রায় অর্ধকোটির অধিক টাকা ক্ষতিসাধন করে। সামানিয়া মোড়ে তার ফার্নিচারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
এছাড়াও ৯নং ওয়ার্ড কমলাপুর এলাকার ইউপি সদস্য হাসমত আলীর বাড়ি ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে তার বসবাস করার মত কোন অবস্থা নাই বলে জানান স্থানীয়রা।
হাইব্রিড নেতার ভয়াবহতার বিষয়ে মুক্তাগাছা থানায় অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তিনজন গণমাধ্যম কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের প্রায় ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন সাবেক মেম্বার নজরুল ও তার বাহিনী এবং তাদের সাথে থাকা মোবাইল, ক্যামেরা, বুমসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেঁড়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের উপর বলপূর্বক একটি ভিডিও ধারণ করে রাখেন সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলামের ছোট ভাই তারিকুল। এরপর থেকে আতংক ও মানষিক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। উক্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকগন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, তিন জন গনমাধ্যমকর্মী পেশাগত দায়িত্ব করতে যাওয়ার সময় বৃষ্টি হানা দিলে চরপাড়া এলাকার একটি দোকানে দাঁড়ায়। এসময় নজরুল মেম্বারের ছোট ভাই তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রায় ২০-২৫ জন লোক এসে আমাদের অটোতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নজরুল মেম্বারের দোকানে। সেখানে প্রায় ৪ ঘন্টা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও বলপূর্বক তাদের একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবী করার পাশাপাশি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে দাওগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক মোঃ আঃ লতিফ মাস্টার বলেন, নজরুল মেম্বার আগে বিএনপি করতো। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। বর্তমানে সে জাতীয় পার্টির নেতা। তার এমন নৈরাজ্য হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের দায় বিএনপির বর্তমান দায়িত্বশীলরা নিবেনা কিনা সেটা তারাই বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নজরুল মেম্বারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাটবাওলার কিছু পোলাপাইনে এগুলো করেছে। আমি আরো তাদেরকে সেইভ করেছি। আমি কিছুই করিনি।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো: আ: লতিফ মাস্টার বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলাম আমার কমিটির ৬ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তির হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। এ বিষয়ে নজরুল মেম্বার আমাকে জানিয়ে ছিলেন যে, মামলা থেকে বাঁচতে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। এখন আওয়ামীলীগ সরকার পতন হওয়ার পর তার ব্যাপক তান্ডব ভাঙচুরে ইউনিয়নজুড়ে আতংক বিরাজ করছে। তবে তিনি পদ ফিরে পেতে এবং জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিষয়টি যাতে প্রকাশ্যে না আসে তাই দাওগাঁও এ ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হতে পারে।
এ ব্যাপারে দাওগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আঃ লতিফ বলেন, নজরুল মেম্বার আগে বিএনপি করতো। এখন কর্মী হিসেবে আছে। এই ঘটনায় আমি গিয়ে তাকে অনেক কথাবার্তা বলেছি। আমার কথা হলো কাজটা খারাপ হয়েছে। তাকে সহিংসতার পথ পরিহার করতে বলা হয়েছে।