পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল অসীম মালিক। তিনি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
এর আগে, তিনি দেশটির সেনাবাহিনীর সদর দফতরে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল (এজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইএসআইয়ের প্রধানকে সাধারণত পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের পরে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়। বিদায়ী আইএসআই প্রধান জেনারেল নাদিম আনজুম ২০২১ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
কে এই নতুন আইএসআই প্রধান অসীম মালিক?
৫৯ বছর বয়সী মালিকের গোয়েন্দা শাখায় কাজ করার সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বেলুচিস্তানে পদাতিক ডিভিশন এবং দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে একটি পদাতিক ব্রিগেডের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেখানে প্রায় দুই দশক ধরে সহিংসতা চলমান। তিনি পাকিস্তানের জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোয়ার্টার কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন এই গোয়েন্দা প্রধানের বাবা গোলাম মুহম্মদ মালিক ৯০ এর দশকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন। অসীম মালিক লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অফ ডিফেন্স স্টাডিজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট লিভেনওয়ার্থ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নইম খালিদ লোধি, যিনি মালিকের বাবার সঙ্গে কাজ করেন। তিনি নতুন গোয়েন্দা প্রধানকে একজন শান্ত সামরিক কর্মকর্তা হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
লোধি বলেন, ‘অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে তিনি অবসরপ্রাপ্ত সৈন্যদের কল্যাণে, বিশেষত পেনশন এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়ে যথেষ্ট কাজ করেছিলেন। পেনশন বিলম্ব এবং প্রবীণদের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগের সমাধান করার জন্য মালিককে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।’
তবে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মালিকের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের মে মাসে ইমরান খানকে আটকের পর হাজার হাজার পিটিআই নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় জেনারেল মালিকের তত্ত্বাবধানে, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনকে সামরিক আদালতের মাধ্যমে বিচার করা হয়।
মালিকের একজন প্রাক্তন সহকর্মী যিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। তিনি বলেছেন, ‘মালিকের নিয়োগ বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির তার প্রতি যে আস্থা রেখেছিলেন তা প্রতিফলিত ঘটায়।’
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আইএসআই পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা, যার সঙ্গে তুলনা করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, ভারতের র এবং ব্রিটিশ এমআই-6 এর। সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ। তবে এর প্রধানকে নিয়োগের সুপারিশ করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। সংস্থাটির বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। সমালোচকরা গোয়েন্দা সংস্থাটিকে ‘একটি দেশের মধ্যে আরেকটি দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।