উম্মতের প্রতি প্রিয়নবী (স.)-এর ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। তাঁর এই ভালোবাসার কথা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল এসেছেন, যিনি তোমাদের বিপন্নে কষ্ট পান, তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সুরা তাওবা: ১২৮)
প্রিয়নবী (স.) দোয়ার সময় সর্বদা উম্মতের কথা স্মরণ করতেন। উম্মতের জন্য তাঁর মন থাকত ব্যাকুল। তাই প্রত্যেক সালাতের পর উম্মতের গুনাহ ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আমরা সেই দরদি নবীর উম্মত। আমরা তাঁর কাছে ঋণী। তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাদের জন্য আবশ্যক। তাঁকে ভালোবাসার অন্যতম দাবি হলো, তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করা। তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করা। এটি আমাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার স্বতন্ত্র নির্দেশও। এমনকি আল্লাহ তাআলা নিজে ও তাঁর ফেরেশতাগণও নবীজির জন্য দরুদ পড়েন। (সুরা আহজাব: ৫৬)
দরুদ পাঠে যেমন নবীজির প্রতি কৃতজ্ঞতা পালন হয়, তেমনি রয়েছে অশেষ সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য একবার রহমতের দোয়া করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি ১০টি রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং (জান্নাতে) তার জন্য দশ স্তর মর্যাদা সমুন্নত করবেন।’ (নাসায়ি: ১২৯৬) অন্য হাদিসে মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি সর্বাধিক দরুদ পড়বে, সে কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন হবে।’ (তিরমিজি: ৪৮৪)
দোয়া কবুলের অন্যতম মাধ্যম হলো দরুদ। দোয়া কবুলের জন্য দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তাআলার প্রশংসাবাক্যসহ দরুদ পাঠ করতে উৎসাহিত করেছেন নবীজি। ফাজালাহ ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোককে নবী (স.) তাঁর নামাজের মাঝে দোয়া করতে শুনলেন, কিন্তু নবী (স.)-এর ওপর সে দরুদ পড়েনি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, এই ব্যক্তিটি তাড়াহুড়া করেছে। তারপর তিনি তাকে ডাকলেন এবং তাকে বা অন্য কাউকে বলেন, তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করলে সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাঁর গুণগান করে, তারপর রাসুল (স.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করে, তারপর তার মনের কামনা অনুযায়ী দোয়া করে। (তিরমিজি: ৩৪৭৭)
ইহকাল-পরকালের সকল কল্যাণ দরুদ পাঠে নিহিত। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর জিকিরের খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরূদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২/৭২; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)
মহানবী (স.)-এর প্রতি দরুদ তাঁর শেখানো বাক্যে পড়া উচিত। কোনো ব্যক্তি বিশেষের তৈরি করা দরুদে ভুলের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই হাদিসে বর্ণিত শব্দ-বাক্যে দরুদ পড়াই নিরাপদ। আল্লাহ আমাদেরকে সবসময় নবীজির প্রতি দরুদ পাঠের তাওফিক দান করুন। আমিন।