কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় প্রাণহানির পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা। ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ নামের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় মানুষের মধ্যে অনেকটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের বাইরে শিক্ষার্থীদের ডাকা এই কর্মসূচি ঘিরে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনও অনেক কম চলছে। মূল সড়কের পাশের দোকানপাটও খুলছে কম।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে দিনভর এই কর্মসূচি চলবে। দিনের শুরু থেকেই ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় দোকানপাট কম খোলা দেখা গেছে। গণপরিবহনও কম দেখা গেছে। অন্যদিনের চেয়ে মানুষের চলাচলও কম লক্ষ্য করা গেছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, পল্টন, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়া পুলিশ-র্যাবের সদস্যদের কিছু সময় পরপর সড়কে টহল দিতেও দেখা গেছে।
বুধবার ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচি চলাকালে শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছেন তারা।
সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। কমপ্লিট শাটডাউন বলতে তারা ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ বুঝিয়েছেন।
এদিকে সকাল থেকে ঢাকায় বাড্ডা, উত্তরার আজমপুর, যাত্রাবাড়ির কাজলা, ইসিবি চত্বর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
কর্মসূচির দিন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর মহিলা কলেজ, সেন্ট গ্রেগরী স্কুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী কোটার পক্ষে স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে। হঠাৎ করে তারা মিছিল বের করলে মহানগর মহিলা কলেজের পাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠলেও শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সামনের দিকে চলে যায়। এ সময় ওই এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
বাহাদুরশাহ পার্ক এলাকা থেকে ঢাকার বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করার কারণে সবসময় এখানে জট লেগে থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই এলাকায় একদম ফাঁকা দেখা গেছে। হাতেগোনা কিছু বাস চলাচল করছে। বাসগুলোতে যাত্রীও বেশ কম দেখা গেছে।
তাঁতীবাজার এলাকায় বেশিরভাগ দোকান রড, সিমেন্ট, লোহার বিভিন্ন সরঞ্জাম, স্বর্ণের। বেলা ১২টার দিকে এই এলাকার বেশিরভাগ দোকান বন্ধ দেখা গেছে। যেগুলো খোলা আছে তাতে ক্রেতা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ওই এলাকার ব্যাংকগুলোতেও গ্রাহকদের আনাগোনা কম দেখা গেছে। ব্যাংকগুলোর মূল গেটে কোথাও তালা দেয়া। কোথাও আবার গেট চাপিয়ে রাখতে দেখা গেছে।
যমুনা ব্যাংকের নয়াবাজার ব্রাঞ্চে দেখা গেছে, অন্যদিন সকাল থেকে টাকা জমা দিতে, তুলতে মানুষের বেশ ভিড় থাকলেও বৃহস্পতিবারের চিত্র ছিল অন্যরকম।
ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, আজকে অনেকটা চাপ কম। সপ্তাহের শেষদিন তো দম ফেলা যায় না। কর্মসূচির কারণে মানুষ আসতেছে কম।
অন্যদিকে গুলিস্তান এলাকায় অন্যান্য সময় যানবাহনের চাপে দীর্ঘ যানজট দেখা গেলেও কর্মসূচির কারণে এখানকার পরিস্থিতিও অন্যরকম দেখা গেছে। বিআরটিসির বেশ কিছু বাস চলতে দেখা গেছে। ব্যক্তি মালিকানা যানবাহন কম লক্ষ্য করা গেছে।
জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়ের চিত্রও একই রকম দেখা গেছে। অন্যদিনের মতো দেখা যায়নি যানজট। হকারদের উপস্থিতিও তুলনামূলক কম। গুলিস্তানের দিকে দোকানপান অনেক বন্ধ দেখা গেছে।
পল্টন মোড়ে ভিক্টর ক্লাসিক বাসের একজন কন্ট্রাকটর সোহেল রানা বলেন, ‘আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাইতাছি। কহন কী হয় বলা মুশকিল। পেটের দায়ে রাস্তায় নামছি। যাত্রীও কম। দিনশেষে জমা উঠানো যাবে কিনা বুঝতেছি না।’