সড়কে নৈরাজ্যের বিষয়টি বহুল আলোচিত। বস্তুত রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। এদিকে চালকদের মধ্যে সড়ক আইন না মানার প্রবণতা বেশি। যার কারণে দিনের পর দিন নগরীর যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন ট্রাফিক পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
সেই সঙ্গে সড়কে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের দাবি- তারা এখনো আগের মতো সক্রিয় হতে পারছেন না। কেউ সড়ক আইন না মানলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে তারা রীতিমতো হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সড়কে বিশৃঙ্খলা বেশেই দেখা যাচ্ছে। চালকরা রাজধানীর সড়কের মাঝখানে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে সড়কে আইন মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে। সড়কজুড়ে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা।
একাধিক পথচারীরা বলছেন, বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা দেখলে মনে হবে না যে এখানে কোনো আইন আছে। কিন্তু আমরা জানি, দেশে আইন আছে এবং এরপরও কেন এত বিশৃঙ্খলা, সেই কারণটিও জানি। অনেকেই জেনে বুঝেই আইন ভঙ্গ করছেন।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে আইন যদি প্রয়োগ না হয়, তবে সেই আইন অর্থহীন। সড়কে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে পুলিশ অনেকটা নিরব ভুমিকা পালন করছে তারা। যেটা নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে আইন যুগোপযোগী করতে হবে।
অন্যদিকে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর ভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে বলে মনে করছেন সড়কে চলাচলরত সচেতন মহল। তাদের দাবি- সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছে না। রাজধানীর রাস্তায় প্রতিদিনই উল্টো পথে গাড়ি চলতে দেখা যায়। অনেকেই দ্রুত বাড়ি ফেরার অজুহাতে উল্টো পথে চলাচলের চেষ্টা করছেন। যার কারণে রাস্তার লেন বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়ক জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে করে একজনের জন্য হাজারও মানুষ পথের মধ্যে আটকে থাকে।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছে, প্রভাবশালীরা নিয়ম ভাঙছে। তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করা এই সময়ে অনেকটা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে পার হওয়া সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা-ভ্যানের বিরুদ্ধে। শহরের যেকোনো রাস্তায় উল্টো পাশ দিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই যত্রতত্র রিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান চলছে। এ ছাড়াও সড়কের উল্টো পাশে চলাচল করতে দেখা যায় গণমাধ্যমের স্টিকারযুক্ত গাড়ি, পুলিশের গাড়ি, সরকারি কর্মকর্তাদের বহনকারী গাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাড়ি, আইনজীবীর গাড়িসহ বেশ কিছু সচেতন মহলের লোকজন ও চলছে উল্টা পাল্টা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ‘ধৈর্যহীন ক্ষমতাবানরা উল্টো পথে বেশি চলছে। উল্টো পথে গাড়ি চালানোয় শুধু আইন অমান্য করাই হয় না। উল্টো মানসিকতা যাদের, তারাই সোজা রাস্তায় না গিয়ে উল্টো রাস্তায় চলে।’
মৎস্য ভবন রোড থেকে উল্টো পথে আসছিলেন মোটর সাইকেল চালক মোঃ শোভন। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমার বাসা কেরানীগঞ্জ। উল্টোপথে এসেছি তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য।
রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে উল্টো পথে চলাচলরত সিএনজি চালক জয়নাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাস্তায় প্রচন্ড যানজট থাকে। মাঝে মাঝে উল্টোপথ ব্যবহার না করলে যাত্রীদের সময় মত গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। এজন্য কিছু কিছু সময় উল্টো পথে চলি।
উল্টো পথে চলাচল করেন ট্রাফিক পুলিশ ধরে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট এর আগে রাস্তায় উল্টো চলাচল করা যায়নি পুলিশে ধরেই মামলা দিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে সাহস করে চলি পুলিশ ধরেও না তেমন কিছু বলেও না। তবে ব্যস্ততার কারণে উল্টোপথ ব্যবহার করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সবার সোজা পথে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ এটা মানতে চাইনা। একই ব্যক্তি বিদেশে গেলে সে আইন মানে কিন্তু দেশে থাকলে আইন ভঙ্গ করে। অনেক শ্রেণীর মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকায় তারা উল্টো পথে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে মানুষের কর্মঘন্টার ক্ষতি করে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নাজমুল হাসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয় তাহলে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা কোনভাবেই উন্নতি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া পুলিশের উপর বড় একটি ধাক্কা দিয়েছে এই সংকট পুলিশ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। অনেক মানুষ ট্রাফিক আইন মানেনা মানতে চায় না। ক্ষেত্রে আমাদের দাবি সাধারণ মানুষ যাতে ট্রাফিক আইন মেনে চলে এজন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।’