
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সিদ্ধান্ত অমান্য, দখল-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের বিষয়ে অনড় বিএনপি। তারা ফিরতে পারছেন না দলে। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ধরে রাখতে তাদের না ফেরানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দলকে গতিশীল করতে প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন করছে বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছানো ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে সদস্যপদ নবায়ন করা হচ্ছে। এক কোটির ওপর সদস্য সংগ্রহ করার আশা করছে বিএনপি। এ মিশনে ত্যাগী, পরিশ্রমী, মেধাবী ও ভালো মানুষের মূল্যায়ন করতে চায় দলটি। তবে বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন করা হবে না। গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়নের এ কর্মসূচিতে নতুন সদস্য নেওয়া হবে না। শুধু পুরোনো সদস্যদের পদ নবায়ন করা হবে। তবে বিভিন্ন সময়ে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য ও দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করায় বহিষ্কৃতদের দলে ফেরানো হচ্ছে না। দলটি বলছে, বহিষ্কৃতদের ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব নেই শীর্ষ নেতৃত্বের। এই মুহূর্তে তাদের দলে ফেরালে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। ত্যাগী, বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া বিপদের সময় যারা দলের সঙ্গ ত্যাগ করেছে, দলের সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের দরকার নেই। তাদের না ফেরানোর বিষয়ে বিএনপি বরাবরই কঠোর।
গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ফরম দেশব্যাপী জেলা ও মহানগর শাখায় বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন, অব্যাহতি পেয়েছেন, এরা কেউ সদস্যপদ নবায়ন করতে পারবেন না। যদিও তাদের সদস্যপদ ছিল কিন্তু আমরা যখন বহিষ্কার করি, তখন সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করি। তারা প্রাথমিক সদস্যপদ নিতে পারবেন না।
রিজভী বলেন, নানা ছোট ঘটনা অথবা ঘটনাও না, সেটা নিয়েই বিএনপিকে নানাভাবে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা তো আছেই নানাভাবে। নানাদিক থেকে, প্রশাসনে, পুলিশে, নানা জায়গা থেকেই তারা কাজ করছে। সেজন্য আমরা যেন আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্বচ্ছ রাখতে পারি, দোসররা ঢুকতে না পারে, অপপ্রচার যেন না করতে পারে, সেজন্য এই নবায়ন কার্যক্রমটা অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির কিছু নেতাকর্মী দখল, চাঁদাবাজি, মামলা, বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে অসংখ্য অভিযোগ আসে বিএনপির কাছে। ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর হয় দলটি। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। দলটির দপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে ১ হাজার ৩১ নেতাকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ সময় ১ হাজার ২০৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ছাড়াও জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়েও অনেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলটি বলছে, সব মিলিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিগত ১৬ বছরে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করার কারণে নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া, প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণে শত শত বিএনপির নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, যারা বহিষ্কৃত আছে তাদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন করা হচ্ছে না। যদি কখনও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়, তখন তারা সদস্যপদ নবায়ন করে নেবেন। নতুন কারও সদস্যপদ দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো অপরাধী, রাষ্ট্রদ্রোহী, গণতন্ত্র হত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারীবান্ধব যাতে দলে প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামায়াতীকরণ হয়েছে
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এক বিশেষ দল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দখল করে নিয়েছে। সব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে জামায়াতীকরণ করা হয়েছে। পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জামায়াতীকরণ করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে জামায়াতী চেতনার লোকজনকে বসানো হয়েছে। আমাদের সমর্থিত লোকজন যেভাবে আওয়ামী লীগের আমলে বঞ্চিত হয়েছে, তেমনি এখনও বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলেছে, রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। এগুলো তো হাসিনার কথার প্রতিধ্বনি। হাসিনা সরকার এবং রাষ্ট্রকে এক করে দিয়েছে। এই সরকার তো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল। আর গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে, আলোচনা-সমালোচনা হবে এবং সরকার সব শুনবে।