
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন ও আদালতের ক্রোক করা সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের পুকুর থেকে চুরি করে মাছ বিক্রির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোপালগঞ্জের দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন সোহেল বাদী হয়ে শুক্রবার (৭ জুন) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় রিসোর্টের হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত গত ২৩ মে এক ক্রোক আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামীয় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অপরাধ সংশ্লিষ্ট সম্পদ ক্রোক ও ৩৩টি ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করার আদেশ দেন। যার মধ্যে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কও আছে।
‘ইতোমধ্যে এসব সম্পদের রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় ক্রোক করা সম্পত্তির মধ্যে রিসোর্টের ভেতরের পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন সম্পদ চুরি করে ধরা হচ্ছে বলে গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায়। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন’, জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে মামলার বাদী মো সোহরাব হোসেন সোহেল উল্লেখ করেন, দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমানের নির্দেশে শুক্রবার (৭ জুন) বিকাল ৫টার দিকে টিম নিয়ে রিসোর্টে যান। সরেজমিন তদন্তে রিসোর্টের ভেতরের ২০ একরের একটি পুকুরে জেলেদের মাছ ধরতে দেখেন। দুদক টিম যাওয়ার খবর পেয়ে হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য আসামিরা পালিয়ে যায়। মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই রিসোর্টের মৎস্য হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামের নির্দেশে তারা মাছ ধরছেন। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, মাছ পচনশীল হওয়ায় সেখানে উপস্থিত গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ অন্যান্যদের সহযোগিতায় জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে জব্দ করা মাছ উপস্থিত মৎস্যজীবীদের মধ্যে নিলামে ৮৩ হাজার ৭৫৪ টাকায় বিক্রি করা হয়। এ টাকা সরকারি খাতে জমা দেওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা এস এম জিল্লুর রহমান রিগানের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে সংশ্লিষ্ট মৎসজীবী, ইউপি চেয়ারম্যান, রিসোর্টের কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মাছ চুরির প্রচেষ্টার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের পুকুর থেকে ধরা ৫৫৫ কেজি তেলাপিয়া মাছ ও সাড়ে ৩৭ কেজি কাতলা মাছ বিক্রি করে নিলাম মূল্য অনুযায়ী ৮৩ হাজার ৭৫৪ টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
আদালতের সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী, জেলা প্রশাসন রিসোর্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পার্কের যাবতীয় মালামালের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।